জাপান যেতে কত টাকা লাগে, বেতন কত ও ভিসা খরচ সহ জাবতীয় তথ্য

আসসালামু আলাইকুম। আপনারা সবাই কেমন আছেন? আশা করি আপনারা সবাই অনেক ভাল আছেন। আজ আমরা আপনাদের মাঝে নতুন একটি পোস্ট নিয়ে হাজির হয়েছে। আশা করি আপনাদের কাছে অনেক ভালো লাগবে। পোস্টটি হল জাপান যেতে কত টাকা লাগবে, বেতন কত ও ভিসা খরচ সহ সকল তথ্য আজ আপনাদের মাঝে জানিয়ে দিব। আশা করি এই পোষ্টের মাধ্যমে আপনারা অনেক উপকৃত হবেন।

আরেকটা কথা না বললেই নয়, জাপান যাওয়ার আগে অবশ্যই আপনাকে সেই দেশ সম্পর্কে কিছু তথ্য জানতে হবে। আমাদের জানামতে বিশ্বের মধ্যে সবথেকে শান্তিপ্রিয় দেশটি হচ্ছে জাপান। তাছাড়া পৃথিবীর মধ্যে সবথেকে পরিষ্কার এবং পরিচ্ছন্ন দেশও কিন্তু জাপান। অত্যন্ত নম্র,ভদ্র এবং সুশৃঙ্খল জাপান দেশের মানুষের। সব সময় পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতা করে সকল প্রকার কাজ করতে পছন্দ করে জাপান দেশের নাগরিকরা। এজন্য বিশ্বব্যাপী তাদের অনেক সুনাম রয়েছে। তাই আজকের এই আর্টিকেলে আমরা আপনাদের সাথে আলোচনা করব জাপান যেতে কত টাকা লাগে, বেতন কত এবং ভিসা খরচ কত এই সকল তথ্য সম্পর্কে।

জাপান যেতে কত টাকা লাগে

মূলত জাপান দেশে যেতে কত টাকা লাগতে পারে পুরোপুরি এটা আপনার ভিসা ক্যাটাগরির উপর নির্ভর করবে। যদি আপনি স্টুডেন্ট ভিসায় জাপান যেতে চান তাহলে সে ক্ষেত্রে আলাদা একটা খরচ হবে। আর যদি আপনি কাজ করার জন্য যেতে চান সেখানেও আলাদা খরচ হবে। কিন্তু এখানে আমি আপনাদেরকে ভ্রমণ ভিসা, স্টুডেন্ট ভিসা এবং তাদের ভিসার খরচ সম্পর্কে জানিয়ে দিব। এই তিন ধরনের ক্যাটাগরির ভিসার ক্ষেত্রে, আলাদা আলাদা খরচ গ্রহণ করতে হয়। তবে কাজের ক্ষেত্রে সবচেয়ে বেশি টাকা খরচ হবে। যদি আপনি আসলেই জাপান যেতে চান তাহলে অবশ্যই আপনাকে ১৭ লক্ষ থেকে ২০ লক্ষ টাকার মত খরচ হতে পারে।

তবে আপনাকে জাপান যাওয়ার আগে অবশ্যই জাপানি ভাষা শিখতেই হবে এটা বাধ্যতামূলক। এই ভাষা না শিখতে পারলে আপনি জাপান যেতে পারবেন না। এই ভাষা শেখার জন্য আপনাকে ভাষার উপর কমপক্ষে তিন মাসের ট্রেনিং করতে হবে। আর সে ট্রেনিংয়ে যদি আপনি পাস করতে পারেন তাহলে আপনি জাপান যাওয়ার পারমিশন পেয়ে যাবেন। আর যদি আপনি স্টুডেন্ট ভিসায় জাপান যেতে চান তাহলে অবশ্যই আপনাকে IELTS SCORE এর অধিকারী হতে হবে সেক্ষেত্রে আপনি জাপান যেতে পারবেন।

জাপান বেতন কত

আমরা জানি জাপানে মানুষ তিন ধরনের ক্যাটাগরিতে গমন করতে পারে। যেমন- কাজের ভিসা, স্টুডেন্ট ভিসা এবং ভ্রমণ ভিসা। তবে কাজের ভিসা পাওয়া জাপান দেশে খুবই কঠিন একটা ব্যাপার। তবে আপনি যদি জাপানে ওয়ার্ক পারমিট একবার হাতে পেয়ে যান তাহলে মনে করবেন আপনি একটি সোনার হরিণ হাতে পেয়ে গেছেন। কারণ অন্যান্য দেশগুলোর তুলনায় জাপানে কাজের বেতন অনেকটাই বেশি হয়ে থাকে। আপনারা যারা জাপানের কাজের বেতন শুনবেন তখন আপনারা অবাক হয়ে যাবেন। এছাড়াও অনেকে পড়ালেখা করার জন্য আবার জাপান গমন করে, সেখানে তারা আবার স্টুডেন্ট থাকা অবস্থায়ও অনেক টাকা উপার্জন করে থাকে। আর অন্যান্য দেশগুলোর তুলনায় জাপান দেশে যেতে আপনার ভিসা খরচ অনেক বেশি লাগতে পারে। বিশেষ করে অন্যান্য দেশগুলোর তুলনায় পাঁচ গুণ বেশি টাকা খরচ হতে পারে। আর যদি আপনি সরকারিভাবে জাপান যেতে পারেন তাহলে প্রতি মাসে সব মিলিয়ে ১.৫ লাখ থেকে ২.৫ লাখ পর্যন্ত টাকা ইনকাম করতে পারবেন।

জাপান ভিসা খরচ

উপরে আমরা আপনাদেরকে জানিয়েছি যে জাপান যাওয়ার জন্য আপনি তিন ধরনের ক্যাটাগরির ভিসা করতে পারবেন। স্টুডেন্ট ভিসা, ভ্রমণ ভিসা এবং কাজের ভিসা। তো আপনাদের সুবিধার্থে জন্য এখন আমরা এই তিন ধরনের ক্যাটাগরির ভিসা সম্পর্কে জানিয়ে দিব। আশা করি মনোযোগ সহকারে পড়ে নিবেন। চলুন তাহলে দেখে নেয়া যাক।

জাপান স্টুডেন্ট ভিসা

যদি আপনি স্টুডেন্ট ভিসায় বাংলাদেশ থেকে জাপানে পাড়ি দিতে চান তাহলে অবশ্যই আপনাকে আনুমানিক ৬০ হাজার টাকার মত খরচ করতে হবে। কিন্তু অন্যান্য প্রাসঙ্গিক খরচ অনেক বেশি হয়। তাছাড়া আপনার বিশ্ববিদ্যালয় ভিত্তিক ভিসার দাম কম বেশিও হতে পারে। তো যদি আপনি জাপান দেশে স্টুডেন্ট ভিসায় যেতে চান আপনাকে সে ক্ষেত্রে প্রতিবছর ১৭ লাখ থেকে ২০ লাখ টাকা খরচ করতে হবে। স্টুডেন্ট ভিসায় জাপান যাওয়ার জন্য আপনার সর্বমোট খরচ হতে পারে বিশ লাখ টাকা।

জাপান কাজের ভিসা

কাজের উদ্দেশ্যে আপনারা যারা জাপান যেতে চান অবশ্যই তাদেরকে ভিসা করতে হবে। অন্যান্য ক্যাটাগরি তুলনায় জাপান কাজের ভিসার দাম একটু বেশি। তাই জাপানে কাজের ভিসার খরচ হতে পারে ২০ লক্ষ থেকে ২৫ লক্ষ টাকা পর্যন্ত। এক্ষেত্রে যদি আপনি আপনার কোন আত্মীয়-স্বজন থেকে থাকে তাহলে আপনি অনেক সুযোগ-সুবিধা ভোগ করতে পারবেন।

জাপান ভ্রমণ ভিসা 

ভ্রমণ ভিসার জন্য আপনারা যারা জাপানে পাড়ি দিতে চান কত টাকা তাদের খরচ হবে সে বিষয়ে এখন আলোচনা করব। তাদের উদ্দেশ্যে তাহলে কিছু বলি, যেমন জাপানে ভ্রমণ ভিসার খরচ পড়বে প্রতিজনের INR ১৫০০ আবার দুজনের ক্ষেত্রে খরচ পড়বে INR ২০০। ভ্রমণের উদ্দেশ্যে আপনি যদি জাপান যেতে চান তাহলে অবশ্যই দুইয়ের অধিক ব্যক্তি হয়ে থাকে তাহলে INR ২৫০০ খরচ পড়বে। যা বাংলাদেশী টাকায় সব মিলিয়ে ৫ লক্ষ টাকার সমান। আশা আপনারা ভিসা সম্পর্কে সকল কিছু বুঝতে পেরেছেন।

কোথায় জাপানি ভাষা শিখবেন

বাংলাদেশের বর্তমানে টেকনিক্যাল ট্রেনিং সেন্টার (TTC) এর মাধ্যমে জাপান যাওয়ার জন্য জাপানি ভাষা Level N5 কোর্স চালু আছে। টিটিসিতে জাপানি ভাষা শিক্ষা কোর্স এ ভর্তি হওয়ার মাধ্যমে জাপানি ভাষা শিখে নেওয়া যায়। তাছাড়া বাংলাদেশের অনেক বেসরকারি প্রতিষ্ঠান এবং কোচিং সেন্টার রয়েছে যেখানে জাপানি ভাষা শিখায়। আপনি চাইলেও সেখান থেকে কোর্স করে নিতে পারবেন। এটা কার উপর নির্ভর করবে।

সরকারিভাবে জাপান যেতে কি কি যোগ্যতা লাগে

যদি আপনি সরকারিভাবে জাপান যেতে চান তাহলে অবশ্যই আপনার সার্কুলারে দেওয়া যোগ্যতা গুলোর মধ্যে আপনার যোগ্যতা থাকতে হবে তবে আপনি সরকারিভাবে জাপান যেতে পারবেন। চলুন তাহলে কি কি যোগ্যতা লাগে এক নজর দেখে আসি।

1. অবশ্যই আপনাকে এসএসসি পাশ হতে হবে।
2. উচ্চতা ১৬০ সেন্টিমিটার হতে হবে।
3. আপনার বয়স হতে হবে ১৮ থেকে ৩০ বছর পর্যন্ত।
4. জাপানের ভাষা দক্ষতা লেভেল N5 সম্পন্ন করতে হবে।
5.  অবশ্যই বৈধ বাংলাদেশী পাসপোর্ট অধিকারী হতে হবে।

সরকারিভাবে জাপান যাওয়ার সুযোগ সুবিধা কেমন

যদি আপনি সরকারিভাবে জাপান যেতে চান তাহলে আপনি যেগুলো সুযোগ সুবিধা পাবেন সেগুলো নিচে দেওয়া হলো।

1. সরকারি খরচে ফ্রিতে জাপান যাওয়া যায়।
2. একটানা পাঁচ বছর কাজ করার সুযোগ সুবিধা পাবেন।
3. থাকার জন্য উন্নত মানের আবাসস্থল পাবেন।
4. উচ্চ বেতনে চাকরি পাবেন।

কত টাকা লাগে জাপানের ভাষা শিখতে

টেকনিক্যাল ট্রেনিং সেন্টার ( TTC) থেকে জাপানের ভাষা শিখতে ভর্তি ফ্রি ব্যতীত কোন টাকা লাগে না। সরকার যখন যা ভর্তি ফ্রি নির্ধারণ করে সেই পরিমাণ তখন টাকা লাগে। তবে সর্বোচ্চ ১,০০০ টাকার মধ্যে হয়ে যায়। অন্যদিকে সরকারিভাবে জাপানের ভাষা শিখতে দশ হাজার থেকে ত্রিশ হাজার টাকা লাগে। তবে প্রতিষ্ঠানভেদে ভাষা শিখার খরচ আরো বাড়তে পারে।

জাপানে চাহিদা সম্পন্ন ১২ টি কাজ ও তার বেতন

এখন আমি আপনাদের মাঝে আলোচনা করব জাপানি চাহিদা সম্পন্ন বারোটি কাজ নিয়ে এবং কোন কাজে কত বেতন সেই বিষয়ে। চলুন তাহলে দেখে নেওয়া যায় কোন কাজে কত বেতন হয়ে থাকে।

কাজ

বেতন

ইলেকট্রিশিয়ান

২ লক্ষ ৫০ হাজার

সিকিউরিটি গার্ড

১ লক্ষ ৫০ হাজার প্লাস

ক্লিনিং

এক লক্ষ পঞ্চাশ হাজার

কম্পিউটার অপারেটর

২ লক্ষ ৫০ হাজার

কন্ট্রাকশন

২ লক্ষ

 

কেয়ারিং ম্যান

১ লক্ষ ৫০ হাজার

হোটেল

১ লক্ষ ৫০ হাজার

স্টোর কিপার

এক লক্ষ পঞ্চাশ হাজার

সেলসম্যান

এক লক্ষ বিশ হাজার থেকে ২ লক্ষ

ফুড ডেলিভারি

১ লক্ষ ৪০ হাজার প্লাস

ফুট প্যাকেজিং

১ লক্ষ ২০ হাজার

তবে মনে রাখবেন জাপানের কাজের জন্য কিন্তু অবশ্যই ভাষার অভিজ্ঞতা থাকতে হবে তা না হলে কিন্তু জাপানে ভালো পরিমাণের বেতন পাবেন না এবং কাজ না পাওয়ারও সম্ভাবনা বেশি থাকে। আর একটা কথা মনে রাখবেন জাপানের কাজ দেওয়ার পরে কিন্তু আবার আপনাকে শূন্য লেভেল থেকে প্রতিটি কাজের উপর ট্রেনিং দিতে হবে। তাই বাংলাদেশ থেকে আপনারা যারা জাপানে যেতে চাচ্ছেন ভালোভাবে কাজটি শিখে যাবেন তবে এমন কোন বাধ্যকতা নেই। তবে বিশেষ কিছু কিছু কাজের জন্য পূর্ব থেকেই অভিজ্ঞতা সম্পন্ন হতে হবে।

জাপানে খাবারের দাম কত

সাধারণভাবে একটি স্থানীয় খাবারের দোকান বা ফাস্ট ফুড চেইনে একটি খাবারের দাম ৫০০ থেকে ১,০০০ ইয়েন হতে পারে। তবে একটি মধ্য-রেঞ্জ রেস্তোরায় একটি খাবারের দাম ১,০০০ থেকে ৩,০০০ ইয়েন হতে পারে। এবং একটি উচ্চ মানের রেস্তোরায় খরচ হতে পারে প্রতি ব্যক্তির ১০,০০০ ইয়েন।

বাংলাদেশ থেকে জাপানের বিমান ভাড়া কত

জাপানি একটি উন্নত এবং প্রযুক্তিশীল দেশ। জাপানের সাথে বাংলাদেশের একটি গুরুত্বপূর্ণ সম্পর্ক রয়েছে। তাই প্রতি বছর বাংলাদেশ থেকে প্রচুর মানুষ জাপানে বিভিন্ন কাজের জন্য গমন করে থাকে। সব সময় জাপান বাংলাদেশের সকল কাজে পাশে থাকে এবং বাংলাদেশের শ্রমিকের জন্য কাজের সুযোগ সুবিধা করে দিয়ে থাকে। বিনিময়ে অনেক বাংলাদেশী নাগরিক বৈদেশিক মুদ্রা অর্থ উপার্জন করে আসছে এবং অর্থনীতিকে সমৃদ্ধ করে তুলেছে।

সারা বিশ্বে প্রশংসিত জাপানের উন্নত চিকিৎসার জন্য। ঠিক তেমনিভাবে বাংলাদেশ থেকেও অনেকে চিকিৎসার জন্য বা ভ্রমণ করার জন্য জাপান যেয়ে থাকে। এজন্য অনেকে জিজ্ঞাসা করে বাংলাদেশ থেকে জাপানের বিমান ভাড়া কত? আজ আমরা তাদের এই প্রশ্নের উত্তর দেওয়ার চেষ্টা করব। চলুন তাহলে দেখে নেয়া যাক বাংলাদেশ থেকে জাপান যাওয়ার বিমান ভাড়া কত।

বাংলাদেশ থেকে জাপান যাওয়ার জন্য একজন যাত্রীর ৮০০০০ থেকে দেড় লক্ষ টাকা পর্যন্ত বিমান ভাড়া লাগবে। তবে জেনে রাখা উচিত যে বিভিন্ন ক্ষেত্রে সামান্য পরিমাণ কম অথবা বেশি বিমান ভাড়াও হতে পারে। আশা করি আপনারা বাংলাদেশ থেকে জাপান যাওয়ার বিমান ভাড়া সম্পর্কে জানতে পেরেছেন।

শেষ কথা

যদি আপনি বাংলাদেশ থেকে জাপান যেতে চান তাহলে উপরের দেওয়া তিন ক্যাটাগরি ভিসার মাধ্যমে আপনি জাপান যেতে পারবেন। যা উপরে সব বিষয়ে আলোচনা করা আছে। তবে আপনি খুব কম খরচে জাপান যেতে পারবেন একমাত্র ভ্রমণ বিষয়ের মাধ্যমে। যদি আবার আপনি টাকা ইনকাম করার জন্য জাপান যান সে ক্ষেত্রে আপনাকে কাজের ভিসা নিয়ে যেতে হবে সেক্ষেত্রে আপনাকে বেশি টাকা দিয়ে যেতে হবে। এছাড়া নতুন নতুন আরো পোস্ট পাওয়ার জন্য আমাদের এই ওয়েবসাইটের সাথেই থাকুন। যদি আমাদের পোস্ট ভাল লাগে তাহলে বন্ধু-বান্ধবের সাথে শেয়ার করে দিবেন। ধন্যবাদ সবাইকে।