মাথা ব্যথা হলে করণীয়

আমাদের আজকের পোস্টের বিষয় মাথা ব্যথা হলে করণীয়। ব্যথার কিন্তু নির্দিষ্ট কোনো কারণ নেই। অতিরিক্ত মানসিক চাপ বা পরিশ্রম থাকলে মাথাব্যথা সেখান থেকেও হতে পারে। এছাড়াও ল্যাপটপ বা মোবাইল ফোন একটানা চালালেও সেখান থেকেও সমস্যা সৃষ্টি হতে পারে। আর যদি মাথা ব্যথা হয় তাহলে আমাদের জীবনযাত্রায় ছেদ পড়ে। যদি আমাদের মাথা ব্যাথা থাকে তাহলে কিন্তু আমাদের কম্পিউটার কিংবা ল্যাপটপের স্ক্রিনের দিকে তাকাতেও ইচ্ছা করে না। তখন আর কোন কিছুই ভালো লাগে না। তবে এই মাথাব্যথা কিন্তু শরীরের জন্য একদমই ভালো নয়। 

আসসালামু আলাইকুম। আপনারা সবাই কেমন আছেন। আশা করি আপনারা সবাই অনেক ভাল আছেন। আজ আমরা আপনাদের মাঝে নতুন একটি আর্টিকেল নিয়ে হাজির হয়েছি। আশা করছি এই আর্টিকেল আপনাদের কাছে অনেক ভালো লাগবে। আর্টিকেলটি হল মাথা ব্যাথা হলে করণীয়। মাথা ব্যথা হলে আপনারা ঘরোয়া কিছু পদ্ধতি কাজে লাগাতে পারেন। আশা করছি  এই পদ্ধতি অবলম্বন করলে আপনাদের মাথা ব্যাথা ঠিক হয়ে যাবে। তাহলে আর বেশি দেরি না করে চলুন এখনই নিচে থেকে দেখে নেওয়া যাক মাথা ব্যাথা হলে করণীয় সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য।

সুষম আহার করুন

আমাদের শরীর সুস্থ রাখার জন্য প্রয়োজন  খনিজ আর ভিটামিনের। তাই সবসময় সুষম খাবার খেতে চেষ্টা করুন। আবার অপুষ্টি খাবার থেকেও কিন্তু অনেক সময় মাথা ব্যাথার সমস্যা সৃষ্টি হয়ে থাকে। খালি পেটে বেশিক্ষণ থাকলেও সেখান থেকেও মাথাব্যথা হতে পারে। আবার দেরি করে খাবার খেলে মস্তিষ্কে গ্লুকোজ সরবরাহ কম হয়। সেখান থেকে হাইপোগ্লাইসেমিয়া হওয়ার সম্ভাবনাও থেকে যায়। তাই প্রতিদিন এমন খাবার খান যাতে আপনাদের শরীরে কোন রকম ক্ষতি যেন না হয়।

মাথা ম্যাসাজ

যদি প্রায় দিন আপনার মাথা ব্যথা থাকে তাহলে মাথা ম্যাসাজ করুন। এতে করে রক্ত চলাচল ভালো হয়। চাপ কমে যায় স্নায়ুর। এবং কি মাথা ম্যাসাজ করার সময় রিলাক্সিং কোন মিউজিক শুনুন। কথাবার্তা বলুন এবং হাসুন এতে করে আপনার মানসিক চাপ কমে যাবে। আর আপনার মন ভালো হয়ে যাবে। আর আপনার মন ভালো থাকলে  অনেক সমস্যার কিন্তু সহজ সমাধান সম্ভব। প্রাণাময় করুন রোজ। এতেও কিন্তু সুস্থ থাকবে শরীর।

নিজেকে হাইড্রেট রাখুন

অনেক সময় মাথা ব্যাথা মাইগ্রেনের কারণেও হতে পারে। আর ইদানিং ওয়ার্ক ফর্ম সকলেরই কাজের চাপ বেড়েছে। সেখান থেকেও কিন্তু এই সব সমস্যা আসে। তাই  প্রতিদিন নিয়ম করে ৮ গ্লাস পানি পান করুন। ইষদুষ্ণ  গরম পানি পান করুন। এছাড়াও ডাবের পানি, স্যুপ এবং জল এসব বেশি করে পান করুন। চা, কফি যত কম খেতে পারেন ততই কিন্তু আপনার পক্ষে ভালো।

সময়ে ঘুম প্রয়োজন

নিয়ম করে প্রতিদিন ঘুমের প্রয়োজন আছে। প্রতিদিন অন্তত ৭-৮ ঘন্টা রাতে ঘুমাতে হবে। কোন সমস্যারই সমাধান হবে না কিন্তু ঠিকমতো ঘুম না পারলে। এতে করে আপনার আরো সমস্যা তৈরি হতে পারে। যেমন মানসিক চাপ পড়তে পারে যার ফলে শরীরে প্রভাব  পড়বে। দিনের পর দিন মাথা ব্যথার সমস্যা থাকলে পরবর্তীতে সেখান থেকে জটিল কোনও সমস্যাও কিন্তু আসতে পারে। অতিরিক্ত পরিশ্রমও এবং অতিরিক্ত উত্তেজনা কিন্তু এড়িয়ে চলতে হবে।

 এক মিনিটে মাথা ব্যথা দূর করার উপায়

মাথাব্যথা কিন্তু বেশ যন্ত্রণার একটি বিষয়। মাথা ব্যাথা নিয়ে দিনভর কাজ করা বেশ অস্বস্তিকর একটি বিষয়। তবে কিছু ঘরোয়া উপায় রয়েছে যা আপনাকে এক মিনিটের মধ্যে আপনার মাথা ব্যাথা দূর করতে সাহায্য করবে। এই পদ্ধতি আপনি অফিসের ডেক্সে কাজ করার সময়ও করতে পারবেন। অথবা ভ্রমণে যাওয়ার সময়ও করতে পারবেন। মাথা ব্যাথা দূর করার প্রাথমিক, নিরাপদ এবং বিজ্ঞানসম্মত উপায় এটি। বেশ কাজে দিবে মাথা ব্যাথা সারাতে এটি। তবে নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে গেলে অবশ্যই ডাক্তারের পরামর্শ নিতে হবে আপনাকে। তাহলে চলুন কিভাবে মাথা ব্যথা থেকে  মুক্ত হতে পারবেন নিচে থেকে দেখে নেওয়া যাক।

 আকুপ্রেশার

মাথাব্যথা দূর করতে অনেকেই বহু বছর ধরে আকুপ্রেশার পদ্ধতি ব্যবহার করে আসছে। এই ছোট্ট ঘরোয়া পদ্ধতিটি এক মিনিটের মধ্যে আপনার মাথা ব্যাথা সারাতে সাহায্য করবে। বাম হাতের বৃদ্ধাঙ্গুলি এবং তর্জনির মাঝখানের অংশে অন্য হাতের বৃদ্ধাঙ্গুলী ও তর্জনী দিয়ে চাপ দিন এবং ঘুরিয়ে ঘুরিয়ে মেসেজ করুন। একইভাবে ডান হাতেও করুন। বিশেষজ্ঞরা বলেন, এতে এক মিনিটের মধ্যে মাথা ব্যাথা সারবে বলে আশা করা যায়।

 লবঙ্গ

তাওআর মধ্যে কিছু লবঙ্গ গরম করে নিন। একটি রুমালের মধ্যে গরম লবঙ্গ  নিন। এরপর এর ঘ্রাণ নিন এক মিনিটের  মত এবং দেখুন মাথা ব্যাথা দূর হয়ে গেছে।

আদা চিবুতে পারেন

টাটকা এক পিস আদা চিবুতে পারেন, এতে করে আপনার এক মিনিটের মধ্যে মাথা ব্যথা দূর হয়ে যাবে। আদা একটু বাজে গন্ধের হলেও পদ্ধতিটি কাজের।

 লবণ যুক্ত আপেল

যদি ব্যথা বেশি হয় তবে এই ঘরোয়া পদ্ধতিটি চেষ্টা করে দেখতে পারেন। এক টুকরো আপেল  চিবুতে পারেন এতে করে আপেলের ভেতরে লবণ ছিটিয়ে নিবেন। খুব দ্রুত এটা ব্যথা  মুক্ত করতে সাহায্য করবে।

 হাসি খুশি মন

হয়তো অনেকেই বিশ্বাস করবেন না, তবে যদি মনকে ইতিবাচক এবং ভালো বিষয়ের থেকে নিয়ে যেতে চান তবে মাথা ব্যাথা এক মিনিটের মধ্যে দূর হয়ে যাবে। একবার চেষ্টা করে দেখুন না কেন?

লেবুর খোসার পেস্ট

লেবুর খোসা মাথা ব্যাথা সারাতে বেশ কার্যকরী একটি জিনিস। লেবুর খোসার  পেস্ট তৈরি করে হাতের কাছে রেখে দিতে পারেন। প্রথমে দুই থেকে তিনটি লেবুর খোসা কেটে আলাদা করে নিন। এবার শুধু মাত্র লেবুর খোসা বেটে কোন পেস্ট এর মত তৈরি করে নিন। মাথা ব্যাথা শুরু হলে এই  পেস্টটি কপালে  লাগান। এতে তাৎক্ষণিক মাথা ব্যাথা উপশম হবে।

গ্রিন টি ও লেবুর পানীয়

গ্রিন টির এন্টিইনফ্লামেশন এবং এন্টিঅক্সিডেন্ট উপাদান খুব দ্রুত মাথা ব্যথার হাত থেকে মুক্তি দেয়। দুই কাপ পানি চুলায় বসিয়ে ফুটিয়ে এক কাপ পরিমাণ করে নিয়ে তা কাপে ঢালুন। একটি গ্রিন টির টি ব্যাগ কাপে দিয়ে গ্রিন টি তৈরি করে নিন। এবার একটি লেবুর অর্ধেকটা রস চিপে গ্রিন টিতে  মেশান। এই পানীয়টি ছোট ছোট  চুমুকে পান করুন। মিনিটের মধ্যে মাথা ব্যাথা দূর হয়ে যাবে। 

পানি পান করুন

এক চুমুক পানি পানও  আপনাকে এক মিনিটের মধ্যে ব্যাথা সারাতে কাজে দিবে। আমাদের শরীর যখন আদ্র হতে থাকে তখন ধীরে ধীরে ব্যথা কমে। আশা করি আপনারা তাহলে বুঝতে পেরেছেন কিভাবে খুব অল্প সময়ের মধ্যে মাথা ব্যাথা দূর করা যায় উপরের এগুলো নিয়ম মেনে চললে  অবশ্যই আপনাদের মাথায় ব্যাথা খুব তাড়াতাড়ি দূর হয়ে যাবে।

 মাথা ব্যথার ওষুধ

একটা বিষয় জানতে হবে ওষুধ খাওয়ার আগে। উনার মাথা ব্যথাটা অন্যান্য কারণে নাকি অন্য কোন কারণে কিনা? যেমন- মাইগ্রেনের মাথা ব্যাথা। বুঝবেন কিভাবে? আমরা যে দুশ্চিন্তা ধরনের মাথা ব্যথার কথা বলেছি এটাকে হালকা থেকে মাঝারি ধরনের ব্যাথা হয়। খুব তীব্র ব্যাথা হয় না। দিনের স্বাভাবিক কাজ চালিয়ে যাওয়া যায়। এ ধরনের মাথা ব্যথার সময় সাধারণত বমি বমি ভাব বা বমি হয় না। হাটা চলা করলেও মাথাব্যথা কমে না। এগুলো যদি দেখা যায় তবে সেই মাথা ব্যাথা মাইগ্রেশনের কারণে হওয়ার সম্ভাবনা বেশি। এছাড়াও এ দুটি মাথা ব্যথার আলাদা আলাদা জায়গা দেখা দেয়। দুশ্চিন্তা ধরনের ব্যাথাটা সাধারণত মাথার দুই পাশে হয়। মনে হয় ব্যথাটা মাথায় চাপ দিয়ে ধরে আছে। আবার কারো কারো মাথার উপর  ভারী একটা ওজন বসে আছে। সাধারণত ব্যথা  মাথার সামনে থেকে পিছনে এবং ঘাড়ে যায়। তবে কিছু কিছু  ক্ষেত্রে মাথার যেকোনো জায়গায় হতে পারে। পক্ষান্তরে মাইগ্রেনের ব্যথাটা অন্য রকম হয়। ব্যথাটা  টনটন করতে থাকে। 

মনে হয় একটা রক্তনালী সংকুচিত ও প্রসারিত হচ্ছে। বুঝে গেলাম তো পার্থক্য। এখন বলছি দুশ্চিন্তা ধরণের মাথা ব্যাথা হলে কি ওষুধ কতদিন হবে। এ ধরনের মাথাব্যথা কমাতে এক হাজার মিলিগ্রাম প্যারাসিটামল কার্যকরী। আমাদের দেশে সাধারণত ৫০০ মিলিগ্রাম প্যারাসিটামল পাওয়া যায়।  ৫০০ মিলিগ্রাম ট্যাবলেট হলে দুটি খাবেন। কখন খাবেন? মাথা ব্যাথা চলে গেলে এই ঔষধ খাবেন না। মাথাব্যথা যদি থেকে যায় তবে চার ঘন্টা থেকে ছয় ঘন্টা পর পর খেতে পারেন। তবে খেয়াল রাখবেন যাতে দিনে আটটি ট্যাবলেটের বেশি না হয়। ওষুধের এ পরিমাণ একজন প্রাপ্ত বয়স্ক মানুষের জন্য। যার অন্য কোন রোগ নেই, শরীরের ওজন ৫০ কেজি বা তার বেশি। আপনার ওজন যদি 50 কেজির নিচে হয় বা অন্য কোন রোগ থাকে তাহলে চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী  ব্যথানাশক  ওষুধ সেবন করবেন।

এতক্ষণ আমরা বললাম সবচেয়ে সাধারণ মাথা ব্যাথার কারণ ও সমাধান এর সম্পর্কে। এখন কয়েকটি মাথাব্যথার ধরন বলবো যেটা হলে চিকিৎসকের পরামর্শ নিয়ে নিশ্চিত হওয়া প্রয়োজন। চলুন তাহলে দেখে নেয়া  যাক।

1. ব্যথা নাশক ওষুধ খেয়েও ব্যথা না কমলে ক্রমশ খারাপ হতে থাকলে।

2. ঘন ঘন ব্যথা দেখা দিলে বা মাথা ব্যাথা তীব্র হলে।

3.  সাধারণত আপনার যে রকম মাথাব্যথা হয় তার ধরন অনেক পাল্টে গেলে সেটাও ক্যান্সারের লক্ষণ হতে পারে।

4. মাথা ব্যথার সাথে বমি ভাব হলে বা  আলো-আওয়াজ  যন্ত্রণাদায়ক হয়ে উঠলে।

5.  মাথার সামনের দিকে বা একপাশে তীব্র টনটনে ব্যথা উপভোগ করলে ব্যথাটি মাইগ্রেশন হতে পারে। অথবা কিছু ক্ষেত্রে ক্লাসটার হেডেক হতে পারে।

6. যদি আপনার বয়স চল্লিশের বেশি হয়, আগে কখনোই মাথা ব্যাথা হত না এবং এখন নতুন করে শুরু হলে সেটা ক্যান্সারের লক্ষণ হতে পারে।

উপরে যে দুটি লক্ষণ বললাম এগুলো হলেই যে ক্যান্সার হতে পারে এমন কোন বিষয় নয়। অনেক কারণেই এমনটা হতে পারে। তবে চিকিৎসকের শরণাপন্ন হয়ে দুশ্চিন্তা মুক্ত হওয়া প্রয়োজন। এখন আরো কয়েকটি মাথা ব্যথার ধরন বলবো যেগুলো দেখা দিলে জরুরী ভিত্তিতে হাসপাতালে যেতে হবে। এতে করে কোন ক্রমেই দেরি করা যাবে না। চলুন তাহলে সে মাথা ব্যাথা গুলোর ধরন কি কি জেনে নেওয়া যাক।

1. মাথায় গুরুতর আঘাত পেলে যেমন কোন দুর্ঘটনা বা কোথাও পড়ে যাওয়ার ফলে।

2. মাথা ব্যাথা হঠাৎ শুরু হলে এবং ব্যথার তীব্রতা অনেক বেশি হলে অথবা মাথা ব্যাথা এত তীব্র হলে যা আপনার জীবনে আগে কখনো হয়নি। এগুলো ব্রেনের রক্তক্ষরণের লক্ষণ।

3. ঝিমিয়ে পড়লে অথবা সংলগ্ন  আচরণ করলে কিংবা গায়ে জ্বর আসলে বা কাপুনি হলে, ঘাড় শক্ত হয়ে গেলে অথবা চামড়ায়  মেশ উঠলে। এগুলো  ব্রেনের ইনফেকশনের লক্ষণ। খিচুনি হলে বা  অজ্ঞান হয়ে পড়লে এগুলো ব্রেনের রক্তক্ষরণের লক্ষণ। চোখের সাদা অংশের লাল হয়ে গেলে, চোখে ঝাপসা দেখলে বা দৃষ্টি শক্তি হারিয়ে ফেললে  এখানেও দূরত্ব চিকিৎসার প্রয়োজন।

4. মাথা ব্যথার সাথে খাবারের সময় চোয়ালে ব্যথা হলে, চোখে ঝাপসা দেখলে অথবা একটার জায়গায় দুটো দেখলে। মাথার তালুতে চাপ দিয়ে ব্যথা অনুভব করলে  দ্রুত হাসপাতালে যাবেন। এগুলো মাথায় এবং ঘাড়ের রক্তনালীর প্রদাহের কারণে দেখা দিতে পারে। এতে এক বা দুই চোখ অন্ধ হয়ে যাওয়ার আশঙ্কা  থেকে যায়।

5. প্রচন্ড মাথা ব্যথার সাথে আরও লক্ষণ থাকলে যেমন: কথা বলতে কিংবা কিছু মনে করতে হঠাৎ অসুবিধা হলে বা হাত অথবা বা দুর্বল, অবস হয়ে এগুলো   স্টকের লক্ষণ।

Read More