সার্বিয়া যেতে কত টাকা লাগে, বেতন কত ও ভিসা খরচসহ যাবতীয় তথ্য

সার্বিয়া হল বাংলাদেশের জন্য একটি সম্ভাবনাময় কাজের জায়গা। হাঙ্গেরি সার্বেরিয়ার সীমান্তের নিকটবর্তী দেশ। সার্বিয়ার  নোভি সাদ (Novi Sad) ইউরোপের সবচেয়ে আনন্দদায়ক শহরগুলির মধ্যে দ্বিতীয়। এখানে বাংলাদেশ থেকে কাজের ভিসা নিয়ে প্রচুর লোকজন কাজ করছে। বাংলাদেশ থেকে সার্বিয়ার ভিসার জন্য এপ্লাই করাটা একদম সহজ করে দিয়েছে ‘স্টিকার ভিসা’ এর অফিস। আপনি যার কারণে বাংলাদেশে বসেই সার্বিয়ার যেকোনো ক্যাটাগরিতে আবেদন করতে পারবেন।

আপনি যদি বাংলাদেশ থেকে সার্বিয়া যেতে চান তাহলে আজকের এই আর্টিকেলটি শুধু আপনার জন্য। বর্তমানে অনেকেই কাজের ভিসার জন্য বাংলাদেশ থেকে সার্বিয়ার উদ্দেশ্যে রওনা দিচ্ছে। কিন্তু আবার অনেকেই সার্ভিসে যাওয়ার জন্য সঠিক কোন গাইড লাইন পান না । তাই আজকে আমরা আপনাদের জন্য এই আর্টিকেলটি নিয়ে এসেছি আপনি বিস্তারিত সকল তথ্য জানতে পারবেন। যেমন-সার্বিয়া যেতে কত টাকা লাগে, বেতন কত, ভিসার খরচ কত, ভিসার আবেদনের নিয়ম এবং কি কি কাগজপত্র দরকার হয় সকল কিছু এই পোষ্টের মাধ্যমে আপনাদের জানাবো। তাহলে আর দেরি না করে চলুন দেখে নেওয়া যাক।

Table of Contents

সার্বিয়া কাজের ভিসা

বাংলাদেশ থেকে সার্বিয়াতে কাজের ভিসা নিয়ে যাওয়ার জন্য বেশ কয়েকটি পদ রয়েছে। যেমন হোটেলে বয়, নির্মাণ শ্রমিক হিসাবে, এবং বাসা বাড়িতে কাজের লোক হিসেবে যেতে পারেন। তবে বিশেষ করে সার্বিয়াতে নির্মাণ শ্রমিকদের জন্য বিশেষ সুযোগ সুবিধা রয়েছে। এ ছাড়াও প্রাইভেট কার এবং বাসের ড্রাইভিং হিসেবেও সার্বিয়াতে আপনি ভালো বেতনের কাজ করতে পারবেন। যদি আপনি হোটেলে কাজ করেন তাহলে আপনার রান্নাবান্নার অভিজ্ঞতা থাকতে হবে। তাহলে আপনি সার্বিয়াতে ভালো পরিমান টাকা ইনকাম করতে পারবেন। যখন সার্বিয়াতে লোক নেওয়ার জন্য নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি দেয়া হয় আপনাকে তখন বাংলাদেশ সরকার অথবা এজেন্সির মাধ্যমে আবেদন প্রক্রিয়াটি করতে হবে। তাহলে আপনি খুব সহজেই সার্বিয়া গিয়ে কাজ করতে পারবেন।

সার্বিয়াতে বেতন কত

সার্বিয়া যেহেতু ইউরোপের একটি দেশ, এ কারণে এখানে মানুষের জীবন যাত্রার মান অনেক উন্নত। এ কারণেই এই দেশের কাজের বেতন বেশি অন্য দেশের তুলনায়। যেমন বাংলাদেশ থেকে প্রচুর লোকজন মধ্যপ্রাচ্যে চলে যায়, সেখানে বেতন তেমনি একটা বেশি হয় না। কিন্তু আপনি যদি ইউরোপের যেকোনো একটি রাষ্ট্রে যেতে পারেন তাহলে সেখানে আপনার প্রথম মাসেই বেতন হবে সর্বনিম্ন ৫০ হাজার টাকার উপরে। আর যদি আপনার যে কোন কাজের দক্ষতা তাহলে আপনি সার্বিয়াতে বেতন পাবেন ৫০ থেকে ৬০ হাজার টাকা।

আর যারা গাড়ি চালায় তাদের প্রতি মাসে বেতন দেওয়া হয় ৮০ হাজার থেকে ৯০ হাজার টাকা পর্যন্ত। তাহলে আপনি বুঝতেই পারছেন যে আপনার দক্ষতা থাকলে ভালো পরিমাণের বেতন পাবেন এই সার্বিয়া দেশটিতে। আর যদি আপনি সার্বিয়াতে লেখাপড়ার করার জন্য যান তাহলে সেখানে পড়ালেখার পাশাপাশি পার্টটাইম জব করেও প্রতি মাসে ৩০ হাজার টাকা আয় করতে পারবেন।

সার্বিয়া কাজের ভিসা খরচ

সার্বিয়া একটি ইউরোপের দেশ হওয়ায় বাংলাদেশ থেকে এই দেশে আসতে অনেক টাকা খরচ হয়ে যায়। আপনারা অনেকে জানেন না যে সার্বিয়াতে কাজের ভিসা কত টাকা। চলুন তাহলে দেখে নেই সার্বিয়াতে কাজের ভিসা খরচ কত।

যদি আপনি নির্মাণ শ্রমিক হিসেবে সার্বিয়াতে প্রকাশ করতে চান তাহলে আপনার জন্য ছয় লক্ষ টাকা গুনতে হবে। আর যদি আপনি রেস্টুরেন্ট এবং হোটেলের কাজের জন্য যান তাহলে আপনাকে ৭ লক্ষ টাকার মতো লাগবে। এছাড়া আপনি যদি ড্রাইভিং পেশায় যেতে চান সে ক্ষেত্রে ৮ লক্ষ টাকা লাগতে পারে। তবে যদি আপনি বাংলাদেশ সরকারের মাধ্যমে ভিসা নিয়ে যেতে পারেন সে ক্ষেত্রে একটু কম টাকা খরচ হবে। আর যদি আপনি কোন এজেন্সির মাধ্যমে সার্বিয়াতে যেতে চান সে ক্ষেত্রে টাকার পরিমাণ একটু বেশি লাগবে। আশা করি সার্বিয়াতে কাজের ভিসার খরচ সম্পর্কে জানতে পেরেছেন।

সার্বিয়াতে কাজের ভিসা করার জন্য প্রয়োজনীয় ডকুমেন্ট

সার্ভিয়া ভিসা করার আগে নিচের দেওয়া এই সমস্ত কাগজপত্র বা ডকুমেন্ট জমা করে রাখবেন।

1. ভিসা আবেদন ফ্রম।
2. লাস্ট ছয় মাসের ব্যাংক টেস্টমেন্ট।
3. হেলথ ইন্সুরেন্স এর কপি।
4. ইনভাইটেশন লেটার বা চিঠি।
5. নিজের হাতে লেখা কভার লেটার।
6. পাসপোর্ট সাইজের ছবি।
7. ইনকাম ট্যাক্স রিপোর্ট কপি।
8. ভ্যালিড পাসপোর্ট মেয়াদ সর্বনিম্ন ৯০ দিন থাকতে হবে।

আরো অন্যান্য ডকুমেন্টও প্রয়োজন হতে পারে। যে সকল ডকুমেন্টগুলো প্রয়োজন হবে আপনি যে এজেন্সির মাধ্যমে যাবেন তারা আপনাকে সকল বিষয় অবগত রাখবেন। সেই মোতাবেক আপনারা কাজ করলে খুব সহজে আপনার ভিসা পেয়ে যাবেন।

সার্বিয়াতে বাঙালিরা কি কাজ করে

বর্তমানে এদেশে অনেক বাঙালি কর্মরত অবস্থায় রয়েছে। তারা অনেকে অনেক রকম কাজ করে থাকে। বিভিন্ন ক্যাটাগরির বিভিন্ন রকমের হয়ে থাকে। চলুন তাহলে দেখে নিন সার্বিয়াতে বাঙালিরা কি ধরনের কাজ করে থাকে আমরা সেগুলো দেখে নেই।

1. হোটেল এর কাজ।
2. ড্রাইভার গাড়ি চালানোর কাজ।
3. পাইপ ফিটিং এর কাজ।
4. মেশিনের কাজ।
5. ইলেকট্রশিয়ান এর কাজ।
6. কন্ট্রাক্টনের কাজ।
7. রেস্টুরেন্টের কাজ।
8. ক্লিনার এর কাজ।
এছাড়া আরো অন্যান্য ক্যাটাগরির কাজ রয়েছে। যেগুলো বাঙালিরা করে থাকে।

সার্বিয়া কাজের ভিসা ধরন

কাজের ধরন: কনট্রাকশন সেক্টর এবং যেকোনো ধরনের ফ্যাক্টরি হতে পারে।
সার্বিয়া ভিসা খরচ : কন্ট্রাকশন সেক্টর ৫.৫০ লাখ টাকা এবং ফ্যাক্টরি ৬ লক্ষ টাকা। এক টাকাও অগ্রিম দিতে হবে না। তবে ওয়ার্ক পারমিট আসার পরে প্রয়োজনীয় যাচাই-বাছাই করে নিশ্চিত হওয়ার পরে বাংলাদেশের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের অনুমোদন, ভিসা ফ্রি, ইন্সুরেন্স এবং অন্যান্য খরচের জন্য মাত্র ৩০ হাজার টাকা প্রদান করলে তার খুবই দ্রুত গতিতে কাজ  হয়ে যাবে। যা ভিসা না হলে ফেরত দেওয়া হবে। দেশ থেকে ম্যান পাওয়ার করিয়ে ফ্লাইট করানো হবে। এছাড়া সার্বিয়াতে টেম্পোরারি ওয়ার্ক পারমিট পাওয়া যায়। সার্বিয়ার জন্য খুব সহজ সেই সাথে অস্থায়ী রেসিডেন্সি ও স্থায়ী বসবাস করাও যায় সার্বিয়াতে। শুধু তাই নয় সার্বিয়াতে ব্যবসায় ইমিগ্রেশন করা সম্ভব, সেক্ষেত্রে সার্বিয়ায় বিনিয়োগ করতে হবে।

সার্বিয়া পারমিট ভিসা

সার্বিয়া কাজের ভিসা ও সার্বিয়া ওয়ার্ক পারমিট ভিসা মূলত একই ভিসা। বাংলায় আমরা বলি কাজের বিষয় আর ইংরেজিতে বলি ওয়ার্ক পারমিট ভিসা। দুটো মূলত একই জিনিস এবং একই কাজ। আপনি সার্বিয়া ওয়ার্ক পারমিট ভিসা নিয়ে সেফের কাজ, ড্রাইভিং এর কাজ, হোটেলের কাজ, রেস্টুরেন্টের কাজ, এবং নির্মাণ শ্রমিকের কাজ করতে পারবেন। বাংলাদেশ থেকে সার্বিয়া যাওয়ার জন্য আপনাকে ভিসার জন্য আবেদন করতে হবে। যদি আপনি সার্বিয়া কাজের ভিসা নিয়ে যেতে চান, তাহলে অবশ্যই সরকারি একটি সংস্থার সাথে কথা বলবেন। এছাড়াও আপনাকে সার্বিয়া ভিসার খরচ জোগাড় করতে হবে। ভিসার সকল টাকা-পয়সার জোগাড় করার পর বাংলাদেশ পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে ভিসার জন্য আবেদন করতে পারবেন। তার আগে কিন্তু আপনি ভিসার জন্য আবেদন করতে পারবেন না। আশা করি আপনারা বুঝতে পেরেছেন।

সার্বিয়া ভিসা ফর বাংলাদেশি

বর্তমান সময়ে করোনা মহামারি কিছুটা স্বাভাবিক হওয়ার কারণে সার্বিয়া সকল ভিসা উন্মুক্ত করা হয়েছে। সার্বিয়া কাজের ভিসা থেকে শুরু করে যে কোন ভিসার জন্য বাংলাদেশ থেকে আবেদন করতে পারবেন। সার্বিয়া ভিসা ফর বাংলাদেশি জন্য সরাসরি বাংলাদেশ পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে যোগাযোগ করতে হবে। তারপর আপনি সার্বিয়া যে বিষয়ের জন্য যেতে চান, সেই ভিসার জন্য আবেদন করতে পারবেন। বর্তমানে সার্বিয়া কাজের ভিসা, সার্বিয়া ওয়ার্ক পারমিট ভিসা, সার্বিয়া টুরিস্ট ভিসা ও সার্বিয়া স্টুডেন্ট ভিসা খোলা রয়েছে। আপনারা চাইলে যে কোন পেশার জন্য আবেদন করতে পারবেন।

সার্বিয়া থেকে উরোপের অন্যান্য দেশে যাওয়া যাবে কিনা

বর্তমানে সার্বিয়াতে কনস্ট্রাকশন কাজের চাহিদা সবচেয়ে বেশি। আপনারা কনস্ট্রাকশন কাজে আসতে পারবেন। যাদের কনস্ট্রাকশন কাজ করার অভিজ্ঞতা আছে কিংবা যারা কাজ করতে পারবেন এরকম ইন্টার্নেশন নিয়ে সার্বিয়াতে আসবেন। এবং আপনার প্রতি যদি টার্গেট থাকে আপনি ইউরোপে যাবেন, সেক্ষেত্রে আপনাকে কিছুদিন সার্বিয়াতে কাজ করতে হবে। যেন আপনি ছয় মাস কাজ করলেন সার্বিয়াতে এবং সেখানে কনস্ট্রাকশনের কাজ করেন। তবে আপনার কাজ শিখে আসতে হবে এবং জানা থাকতে হবে। কাজের অভিজ্ঞতা ছাড়া আপনি এসে বিপদে পড়ে যাবেন এটা একটা পয়েন্ট। এর পরে হচ্ছে যে আপনারা ফ্যাক্টরির কাজগুলোতে আসতে পারেন।

সার্বিয়া থেকে ইউরোপের অন্যান্য দেশে যাওয়ার নিয়ম

অনেকেই প্রশ্ন করেন যে আমি কি সার্বিয়াতে গিয়ে পরবর্তীতে ইউরোপের আরো ভালো একটি রাষ্ট্রে যেতে পারব কিনা? আমি বলব হে অবশ্যই যেতে পারবেন, তাদের নির্দিষ্ট একটি সময় পর্যন্ত আপনাকে সার্বিয়াতে কাজ করতে হবে। কিন্তু ঠিক কত সময় ধরে কাজ করতে হবে সেটা আপনার কোম্পানির সঙ্গে কথা বলে নিবেন। আপনার সঙ্গে তাদের কি চুক্তি হয়েছে এবং তাদের কাজ করার জন্য সময় সাপেক্ষে কোন শর্তাদি রয়েছে কিনা।

সার্বিয়া থেকে ইউরোপের অন্যান্য দেশে দুইভাবে যেতে পারবেন। একটি হল বৈধভাবে আরেকটি হলো অবৈধভাবে। তবে আমি বলব বৈধভাবে সার্বিয়া থেকে আপনি ইউরোপের অন্যান্য কান্ট্রিতে যাওয়ার চেষ্টা করবেন, এটা আপনার জন্য নিরাপদ। যখন আপনি সার্বিয়াতে নির্দিষ্ট সময় পর্যন্ত কাজ করবেন এবং সেই সময়টুকু থেকে উত্তীর্ণ হবেন, তখন আপনি চাইলে কারো মাধ্যমে অথবা নিজে নিজেই ভিসা প্রসেসিং এর কাজ শুরু করতে পারবেন। এক্ষেত্রে আপনি পোল্যান্ড বা পর্তুগাল ওয়ার্ক পারমিট ভিসার জন্য আবেদন করতে পারবেন। সেখান থেকে সিজনাল ভিসার মাধ্যমে ইউরোপের অন্য কান্ট্রিতে ধারাবাহিকভাবে যেতে পারবেন।

সার্বিয়ায় এক কোম্পানির ভিসা নিয়ে অন্য কোম্পানিতে কাজ করা যাবে কিনা

অনেকের প্রশ্ন থাকে যে, সার্বিয়াতে আসার পরে কোম্পানি পরিবর্তন করতে পারবেন কিনা। কারণ অনেকেই কিন্তু বিভিন্ন কোম্পানিতে আসবেন কিন্তু আপনারা সেই পছন্দের কাজটি যদি না পান, তাহলে কোম্পানি পরিবর্তন করা যায় কিনা? উত্তরে আমি বলব হ্যাঁ! সার্বিয়াতে আসার পরে কোম্পানি পরিবর্তন করতে পারবেন এবং ভালো বেতনে কাজ করতে পারবেন। তবে আপনাকে একটু অপেক্ষা করতে হবে।

বাংলাদেশে সার্বিয়া এম্বাসি আছে কিনা

আপনাদের অনেকের প্রশ্ন থাকতে পারে যে, বাংলাদেশে কি সার্বিয়া এম্বাসি রয়েছে। বর্তমানে বাংলাদেশের সার্বিয়া এম্বাসি নাই। অনেক সময় বিভিন্ন ক্ষেত্রে সার্বিয়া যাওয়ার জন্য আপনাদের এম্বাসি ফেস করতে হতে পারে। সে ক্ষেত্রে আপনাকে ইন্ডিয়া সার্বিয়া এম্বাসি যেতে হবে, যদি এম্বাসি ফেস করতে হয়। যদি আপনি কোন এজেন্সির দ্বারস্থ হন, বা কোন দালালের সাহায্য  কাজ করেন, সেক্ষেত্রে তারা এ কাজগুলো করে থাকবে। এরকম আপনাকে কোনো টেনশন নিতে হবে না কিংবা প্যারা নিতে হবে না। আপনি একদম চিন্তা মুক্ত থাকতে পারেন।

Read More